Make money by Ojooo

Thursday, November 16, 2017

একটি অপদার্থ বালকের গল্প :
লেখক ফয়জুল হক
--------------------(- _- )------------------
আমি মনসুর ছোট বেলায় আমার খুব পাখি মারার শখ ছিল, প্রতিদিনই পাড়ার ছেলেদের সাথে পাখি মারতে চলে যেতাম। সেখানে নানান ধরনের ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করতাম। তার মধ্যে একটা হলো বাড়ির পাশের ছোট খালের মধ্যে জমাট বাধা পানি চারিদিকে উচু করে মাটির আইল তৈরি করতাম যাতে পাখি পানি খেতে না পারে, আর এক অথবা দু দিক থেকে খোলা রেখে সেখানে ইঁদুর মারার কল অদৃশ্য করে পুতে রাখতাম আর সেখান দিয়ে যখন পাখিটি পানি খেতে যেত তখনই আটকা পরে যেতো। তবে প্রতিদিন পেতাম না আর পেলেও আমার ভাগেরটা বাড়ি পর্যন্ত আনার সাহস হতোনা। কারন আমার বাবা ছিলেন খুব রাগী টাইপের মানুষ পরিবারের একমাত্র ছেলে বিদায় আমার প্রতি সবার কড়া নজর থাকতো। অার রাতে পড়তে বসতাম তখন শুধু ভাবতাম লেখাপড়া অাবিস্কার যে করেছে তাকে হাতের নাগালে পেলে আচ্ছা করে বুঝিয়ে দিতাম, বেটা ফাজিল। এই রকম আরো কতো গালাগাল। বিশেষ করে রাতে পড়তে বসার পর বাবা জিজ্ঞেস করতো তোদের গণিত স্যার আজকে কোন কালারের শার্ট গায়ে দিয়ে স্কুলে গিয়েছিল?? তখন আমি বাবার কাছে ধরা খেয়ে যেতাম যে আমি স্কুলে যাইনি। আর বাড়িতে পাখি আনলেতো বুঝেই ফেলবে যে স্কুল চুরি করেছি। কোনদিন বাবার মন ভালো থাকলে বলবে বাবা লেখাপড়া না করলে কখনো ভাল কিছু করতে পারবিনা স্কুল চুরি করিসনা মন দিয়ে পড়াশুনা কর। আর যদি মেজাজ খারাপ থাকে তাহলে আর কি! যা হওয়ার তাই হয়। কতক্ষণ কান্নাকাটি করে না খেয়ে ঘুমিয়ে পরতাম। স্কুলে খুব দুস্টুমি করতাম বলে স্যারেরাও অনেক মারতেন আর স্টুডেন্ট হিসেবেও ছিলাম একবারে লাস্ট ব্রেঞ্চের কিছুই পারতামনা। আর আমি পড়াশুনা করলেইতো কিছু পারবো!
যাই হউক পরীক্ষার সময় কোন রকম দেখাদেখি করে পরীক্ষা দিলেও রেজাল্টের সময় ২ / ৩ বিষয় ফেইল থাকতাম। স্যারদের সামনে বাবার বকুনি খাওয়ার পর স্যার বলতেন ঠিক আছে এবান প্রমোশন দিয়ে দিচ্ছি ভাল করে পরবে। যাক এমনি ভাবে টেনে টুনে ইন্টার পাশ করার পর হঠাৎ একদিন বাবা অসুস্থ হয়ে গেল। প্যারালাইসিসে একটি হাত ও পা অবস হয়ে যায়। পরিবারের সকল দায়ীত্ব আমার উপর চলে আসে। কিন্তু আমাকেতো বাবা কোনদিন কোন কাজ করতে দেয়নি, আমি এখন কি কাজ করবো বুঝে উঠতে পারছিনা। কিছুদিন পাশের বাড়ির কাকার সাথে বিল্ডিং এর কাজ করলাম কিন্তু সারাদিন কাজ করার পর ৪০ টাকার উপরে তিনি দিতেননা। বাড়িতে মানুষ এসে মা এবং বাবাকে কথা শুনাতো তুমার পুলা না হইয়া যদি মেয়ে হইতো তাও ভাল ছিল এই ছেলে তুমাদের রোজগার করে খাওয়াবে এটা কোনদিন ও আশা কইরোনা। নানান মানুষের নানান কথা শুনতে শুনতে তারাও অব্যস্ত হয়ে গেছে। যাক পরে একদিন বাবা আমাকে রাতে খাবারের সময় বলছে এমনে আর কতদিন চলবি এবার কিছু একটা কর? কিন্তু আমি চুপ করে রইলাম তখন মা বাবার সাথে সুর মিলিয়ে আমাকে বললো উত্তর পাড়ার মফিজ ব্যাপারি বলছে হাওরের জমিটা তার নামে লিখে দিলে সে তোকে বিদেশে পাঠাবে। কিন্তু বাবা কত কস্ট করে এই জমি কিনেছে তা আমি জানি তবুও আমি কিছু বললামনা।বাবার সিদ্ধান্ত আমি উপেক্ষা করলামনা। কিছুদিন পর আমাকে পাসপোর্ট করার জন্য পাঠালো সকল প্রসেসিং শেষ হওয়ার পর কোন এক তারিখে আমাকে সৌদি আরবের এ পাঠিয়ে দিলো। বিদেশে আসার পর নতুন দেশ নতুন আমি এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা ।কিন্তু অামি থমকে যাইনি আমি প্রথমে গাড়ি ধোয়ার কাজ শুরু করলাম সামান্য কিছু বেতনে কিন্তু কিছুদিন পরেই লোকটি আমাকে বের করে দিলো এবং অন্য জায়গায় কাজ নিতে বললো। আবারো প্রমাণ হলো সত্যিই আমি একজন অপদার্থ। এলাকার এক চাচার বাসায় উঠলাম কিছুদিনের জন্য, কিন্তু ওনার রুমমেটরাও কানাকানি করতে লাগলো যে কতদিন থাকবে হেনতেন। কত বেলা যে না খেয়ে রাত কাটিয়েছি তা বলা মুশকিল এবং ঐ রুমের প্রতিটা বালু কনাই আমার চোখের জলের স্বাদ অনুভব করেছে তা আমি ছাড়া কেউ জানেনা। কিন্তু আমি হাল ছারিনি ৩ বছরে যে কত কাজ করছি তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু টাকা পাঠিয়েছি মাত্র ১লাখ। পরে সিলেটের এক ভাইয়ের পরামর্শে রাস্তার পাশে বালতি নিয়ে গাড়ি ধোয়ার কাজ শুরু করলাম। এবং বাড়িতে বাবা মাকে নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছি তাতেই বাবা মা খুশি সেই অকর্মা ছেলেটি এখন টাকার পেছনে হন্য হয়ে দৌড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে আমার অবস্থা পরিবর্তন হতে শুরু করলো। একদিন এক সৌদি আমাকে বললো আমার একটা গাড়ির মাকসালা আছে তুই যদি কাজ করস আমি চালু করে দিব। তার কথা মত সেখানে কাজে যোগ দিলাম এবং অাল্লাহর অশেষ কৃপায় এখন আমার ৫টা গাড়ি ধুয়ার মাকসালা সহ বহুজাতের ব্যাবসা রয়েছে।
অামার জীবন থেকে সব থেকে বড় শিক্ষনীয় বিষয় হলো যত কঠিন সমস্যাই হউক না কেন তা ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। আল্লাহ নিশ্চয় কষ্টের পরে সুখ রেখেছে।
(ঘটনাটি পুরোপুরি কাল্পনিক কারো জিবনের সাথে মিলে গেলে লেখক কোন ভাবেই দায়ী নয়)

একটি অপদার্থ বালকের গল্প : লেখক ফয়জুল হক --------------------(- _- )------------------ আম...